মাথার চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার
এই পোস্টের দ্বারা আমরা জানতে চেষ্টা করব। অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ। অতিরিক্ত চুল পড়ার সমাধান।ছেলেদের চুল পড়া কারণ ও প্রতিকার। মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ। অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ। চুল পড়ার ডাক্তারি চিকিৎসা।প্রাকৃতিক উপায়ে চুল পড়ার প্রতিকার। ইত্যাদি সকল বিষয়ের তথ্যগুলো জেনে নেই-
উপরের তথ্যগুলোর বিষয়ে হয়তো আমাদের জানা নাও থাকতে পারে। এইজন্য আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে উপরে তথ্যগুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম। এই পোস্টগুলো পড়ে হয়তো আপনি অজানা কিছু তথ্য জানতে পারবেন।
ভূমিকা
চুল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিশেষ। যা একজন ব্যক্তির সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। একজন ব্যক্তিকে সুন্দর দেখাতে চুল বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ছেলে অথবা মেয়ে চুল ছাড়া পায় বেমানান। চুলের আরেক নাম হচ্ছে কেশ। এই কেস নামটা সচরাচর ব্যবহার হয় না।ট্রাইকো এর অর্থ হচ্ছে চুল। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আবার বৈজ্ঞানিক এর ভাষায় ব্যবহার হয়ে থাকে।
সাধারণভাবে একজন সুস্থ পুরুষ মহিলার মাথাতে এক অথবা দেড় লাখ মতো চুল থাকে। আমাদের চুলের গড় আয়ু হয় ২ হতে ৮ বছর। এই এক দেড় লাখ চুলের মাঝে প্রতিদিন চিরুনি করার সময় প্রায় ১০০ টা করে চুল ঝরে পড়ে।
অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ
ইদানিং সব শ্রেণীর মানুষেরই চুল পড়া দেখা যায়। ডাক্তার এরা বলেছেন অল্প বয়সের চুল পড়া ন্যূনতম কারণ থাকতে পারে। এর মধ্য উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হলও মানসিক চাপ বা টেনশন, দুশ্চিন্তা, চুলের যত্ন না নেওয়া, পুষ্টিহীনতা অস্বাস্থ্যকর ভাবে জীবন যাপন ইত্যাদি। অল্প বয়সে চুল পড়ার ন্যূনতম কিছু কারণ দেওয়া হল-
ভেজা চুল নিয়ে শুয়ে পড়া:গোসল করার পর চুলগুলো কে ভালোভাবে না শুকিয়ে শুয়ে পড়া এর ফলে চুলগুলো ভালোভাবে শুকায় না ভেজা হয়ে থেকে যায়। চুল না শুকানোর জন্য চুলের গোড়া থেকে চুল ওঠা শুরু করে এবং আস্তে আস্তে অনেক চুল উঠতে থাকে। অন্যদিকে চুল না শুকিয়ে ভেজা চুলে চিরুনি করলে ও চুলের মাঝ থেকে চুল ভাঙতে শুরু করে।
বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া:অল্প বয়সে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে অনেক পাওয়ারফুল এন্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হয়। আর এই ওষুধের পাওয়ারে ও মাথার চুল উঠে যায়। একেক রোগের একেক রকম অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ হয়ে থাকে যেগুলো খেলে শরীরের বিভিন্ন রকম প্রভাব ফেলে যার ফলে চুল উঠে যায়। থাইরয়েড ও এল পেশিয়া রোগে আক্রান্ত হলেও মাথার চুল ঝরে যায়। আবার ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত রোগীদের যে কেমোথেরাপি দেওয়া হয় সেটার জন্য চুল উঠে যায়।
অতিরিক্ত মানসিক টেনশন দুশ্চিন্তা:মানসিক টেনশন বা চাপ এর প্রধান শিকার হচ্ছে চুল আর এই মানসিক টেনশন বা চাপের কারণে অনেক চুল ঝরে যাচ্ছে। অনেক সময় মানসিক টেনশন বা চাপে থাকার ফলে আমাদের চুলের যে বৃদ্ধির চক্র থাকে সেটাকে ব্যাহত করে ফলে চুল অনেকটাই পাতলা হয়ে যায় এবং ঝরে যায়।
দুশ্চিন্তার ফলে ও অতিরিক্ত মাত্রায় চুল ঝরতে পারে। অন্যদিকে অনেক সময় ধরে দুশ্চিন্তা করার ফলে হরমোন এর ভারসাম্য গুলো নষ্ট হয়ে। যায় ফলে এর ব্যাপক প্রভাব গিয়ে পরে হেয়ার ফলিক গুলোর উপরে। ফলে চুলের গোড়াগুলো অনেকটাই দুর্বল হয়ে যায় এবং মাথায় থাকা চুলগুলো অল্পতেই উঠে আসে।
পুষ্টিহীনতা অভাবে: পুষ্টিকর খাবার বলতে শর্তকরা, ভিটামিন, প্রোটিন, চর্বি, আয়রন ওখনিজ এর অভাবে ও চুল উঠে যায়। পুষ্টিকর খাবার যেমন শরীর ভালো রাখে ঠিক তেমনি চুলও ভালো রাখে। পুষ্টিকর খাবারের জায়গায় অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খাওয়ার ফলে চুল পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি পায় না। আর এই পুষ্টি না পাওয়ার কারণে চুল পড়ে যেতে শুরু করে।
চুলের যত্ন না নেওয়া: সঠিকভাবে চুলের যত্ন না দিলেও চুল উঠে যায়। নিয়মিত চুল না আচরানো মাথার চুলে সঠিকভাবে তৈল বা শ্যাম্পু না দেওয়া। মাথার চুল সব সময় টানটান করে বেঁধে রাখা ফলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় চুলের গোড়া থেকে গুলো চুল উঠে আসে।
চুলে বিভিন্ন ধরনের রং ব্যবহার করা: চুলকে সৌন্দর্য দেখানোর জন্য আমরা অনেক রকম পাওয়ারফুল কালার করে থাকি। এই পাওয়ারফুল রঙ প্রতিনিয়ত ব্যবহারের ফলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ে আবার চুলের মাঝ থেকে ভাঙ্গা শুরু করে । এই রং গুলোতে অনেক কেমিক্যাল থাকে যা চুলের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
অতিরিক্ত চুল পড়ার সমাধান
অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিহার করা। চুলের নিয়ম মত যত্ন নেওয়া সপ্তাহে দুইবার চুলে তেল এবং দুইবার শ্যাম্পু করা। ভিটামিন বি যুক্ত খাবার খেতে হবে ডিম হচ্ছে ভিটামিন বি যুক্ত খাবার যা চুলকে আস্তে আস্তে লম্বা এবং ঘন করে। নিয়মিত চুলে হিট দিয়ে সোজা না করা নিয়মিত হিট দেওয়ার ফলে চুল মাঝ থেকে ভেঙ্গে যায় এজন্য হিট না দেওয়া। কেমিক্যাল যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। রাতে ঠিকঠাক ভাবে ঘুমানো দুশ্চিন্তা, টেনশন ,এসব থেকে দূরে থাকা এসব নিয়ম-নীতি মেনে চললে আসতে আসতে চুল পড়ার সমাধান হবে।
ছেলেদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার
ছেলেরা বিভিন্ন কাজ থেকে প্রায় বাড়ির বাইরে থাকে ।এর ফলে রোদ এবং তাপে তাদের চুল অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। ছেলেরা বেশিরভাগ বাইরে থাকার ফলে চুলের ঠিকমতো যত্নও নিতে পারেনা। যত্ন নিতে না পারায় চুল পড়তে শুরু করে। ছেলেরা বাইরে থাকার ফলে বাড়ির এবং বাইরের অনেক চিন্তা করে। এই চিন্তা বা চাপের কারণেও চুল উঠতে থাকে।বাইরে থাকার ফলে ঠিকমতো পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেনা। পুষ্টিকর খাবারের অভাবেও চুল ঝরা শুরু করে।
পুষ্টিকর এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া। অনেক সময় মাথার ত্বকের সমস্যার কারণে ও চুল উঠে যায় সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের চিকিৎসা নেওয়া ।মাথার চুল এর যত্ন সঠিক নেওয়া এবং সপ্তাহে দুইবার শ্যাম্পু এবং তেল ম্যাসাজ করা। নিয়মিত ঘুম পাড়া ও মানসিক চাপ দুশ্চিন্তা এসব থেকে দূরে থাকা। ধূমপান করার ক্ষেত্রেও চুল উঠে যায়। এজন্য ধূমপান থেকে বিরত থাকা। পানির শূন্যতার কারণে ও চুল উঠতে পারে এজন্য প্রতিদিন এক থেকে দেড় কেজি মতো পানি পান করা উচিত।
মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ
এন্ড্রোজেনেটি এলোপেসিয়াকে ডাক্তাররা বলে মেয়েদের চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা। এই সমস্যার ফলে মেয়েদের কানের উপরে দুই সাইডের চুল পড়তে থাকে এবং আস্তে আস্তে চুল পাতলা হতে থাকে। একটি মেয়ে দৈহিক ১০০টা চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু স্বাভাবিক থেকে যখন বেশি চুল পড়া শুরু করে তখন এটা এন্ড্রোজেনেটিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এ সমস্যা প্রায় নারীর দেখা যায়।
একজন গর্ভবতী মেয়ের বাচ্চা হবার পর চুল উঠতে শুরু করে তার কারণ হচ্ছে হরমোনের পরিবর্তন। হরমোন এর কারণেও চুল উঠে যায় ।আবার ভিটামিন- বি যুক্ত খাবার অভাবেও চুল উঠে যায় ।মাথায় অতিরিক্ত খুশকি ও ছত্রাক এর ফলেও চুল উঠতে পারে এর ফলে সঠিক ভাবে চুলের যত্ন না নেওয়া ইত্যাদিও হতে পারে চুল পড়ার কারণ।
অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ
অতিরিক্ত চুল পড়া বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হতে পারে। স্বাভাবিকের চেয়ে যখন বেশি চুল পড়তে শুরু করে তখন সে চুল পরা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়।আবার চুলে বার বার হিট দিয়ে সোজা করলে অথবা কেমিক্যাল যুক্ত রং চুলে দিলে চুলের অনেক ক্ষতি হয়।অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণে যেসব রোগের লক্ষণ দেখা যায় তা হলো-
ক্যান্সার: ক্যান্সার রোগীদের যে কেমোথেরাপি দেওয়া হয় সেটার জন্য আস্তে আস্তে রোগীর চুল উঠে যায়।
ত্বকের সমস্যা: মাথার ত্বকের যদি কোন সমস্যা থাকে বা খুব সেই ছত্রাক জনিত কোন কিছু দেখা যায় সে ক্ষেত্রেও চোর উঠে যায়।
অ্যান্ড্রজেনেটিক এলোপেসিয়া: এ রোগে আক্রান্ত রোগীর দুই সাইডে কানের উপরে চুল আস্তে আস্তে উঠে যায় এবং চুল অনেক পাতলা হয়ে যায়।
হরমোন: একজন গর্ভবতী মেয়ের শরীরে হরমোনের অনেক পরিবর্তন দেখা যায় এই হরমোন পরিবর্তনের ফলে ও চুল ঝরতে থাকে।
চুল পড়ার ডাক্তারি চিকিৎসা
চুল পড়া কমানোর জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এবং ডাক্তার যেসব মেডিসিন দিবে সেগুলো নিয়মিত সেবন করতে হবে। এছাড়া সার্জারির মাধ্যমে ও চুল প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। এছাড়াও বিভিন্ন সিরাম,লোশন,তেল সাজেস্ট করে যেগুলো ব্যবহারের ফলে চুল পড়া অনেক কমে যায় ।
প্রাকৃতিক উপায়ে চুল পড়ার প্রতিকার
প্রাকৃতিক উপায়ে ও চুল পড়া রোদ করা যেতে পারে। সপ্তাহেএক থেকে দুইবার পেঁয়াজ কেটে চুলে ব্যবহার করতে হবে। এরকম এক মাস ব্যবহারের ফলে চুল পড়া অনেক কমে আসে। আবার মেহেদী এর সাথে জবা ফুল আর ডিম ব্যবহার করলেও চুল পড়া কমে। মাঝেমধ্যে তেলের সাথে লেবু ব্যবহার করতে হবে। লেবু ব্যবহারের ফলে ও চুল ঝরা কম হবে।মেথি অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে ও প্রাকৃতিকভাবে চুল ঝরা কমে।
শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক এবং পাঠিকা বিন্দু।এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের যেসব তথ্য জানাতে চেষ্টা করেছি তা হল, মাথার চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার, অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ ,ছেলেদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার, মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ,অতিরিক্ত চুল পড়ার সমাধান,চুল পড়ার ডাক্তারি চিকিৎসা,অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ, প্রাকৃতিক উপায়ে চুল পড়ার প্রতিকার , ইত্যাদি সম্পর্কে।
আমাদের দেওয়া পোষ্টের এই তথ্যগুলো যদি আপনাদের পছন্দ হয় হয়ে থাকে। তাহলে পোস্ট টি শেয়ার করবেন যেন পোস্টটি পড়ে সবার সঠিক তথ্যটি জানতে পারে।
জুয়াদ্দার এআই এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্টের উত্তর দেওয়া হয়
comment url