গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়

আজকের লেখা পোষ্টের মাধ্যমে আমরা যে তথ্য জানাতে চেষ্টা করছি সেটা হলো, পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ? গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ? গর্ভবতী হওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহের লক্ষণ ? এর সম্পর্কে।
তাছাড়া আরো জানাতে চেষ্টা করেছি যে,গর্ভবতী হওয়ার তৃতীয় সপ্তাহের লক্ষণ? লক্ষণছাড়া হগর্ভবতী , প্রেগন্যান্ট হওয়ার কতদিন পর বমি হয়, দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ? ইত্যাদি বিষয়াদি সম্পর্কে। তাই এসব বিষয়ে জানতে পোস্টটি পুরোটা অংশ পড়ুন।

পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

আমরা জানি যে পিরিয়ড মিস হওয়া মানে গর্ভবতীর লক্ষণ। আবার অনেক মহিলা আছে যারা পিরিয়ড মিস না করেও তারা গর্ভধারণ করেছেন। পিরিয়ড মিস হওয়া ছাড়া শরীরের কিছু পরিবর্তন এর মাধ্যমে জানা যায় গর্ভবতী কিনা। পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে হালকা হালকা যদি ব্লিডিং দেখা দেয় সে ক্ষেত্রেও বোঝা যায় গর্ভধারণ এর লক্ষণ।তবে আসুন লক্ষণগুলো কি কি জেনে নেই।
মর্নিং সিকনেস: গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এ লক্ষণ টি দেখা দেয় । মর্নিং সিকনেস রাতেও দেখা দিতে পারে আবার দিনেও দেখা দিতে পারে।ডাক্তারদের মতামত অনুযায়ী এ লক্ষণটা একমাস পর দেখা দিতে শুরু করে ।এ সময় অনেকটা অস্বস্তি হয় এবং শুরু হয় বমি যেটা ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর দেখা দেয় ।শরীর গলানো অথবা বমি হওয়া অ্যাস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের এর স্তর বেশি হওয়ার ফলে এটা হয়। যার কারনে সকালে এবং দিনেও অনেকবার বমি হয়ে থাকে। প্রায় ৮০ % মেয়েদের এই সমস্যা হয়।

শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি হওয়া: আগের তুলনায় শরীরের তাপমাত্রা অনেক বৃদ্ধি হতে পারে। হঠাৎ জ্বর সর্দি দেখা দেয়। এরকম হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে গর্ভধারণের লক্ষণ বোঝা যায়

মাথাব্যথা ও ক্লান্তি অনুভব হওয়া: গর্ভধারণের প্রথম দিকে প্রচন্ড মাথা ব্যথা হতে পারে। শরীরের রক্তের সঞ্চালন ও হরমোনের স্তর বেশি হওয়ার ফলে এই সমস্যা হয়। আবার শরীর অল্পতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এসব লক্ষণ ও গর্ভধারণের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।

ব্লিডিং দেখা দেওয়া: পিরিয়ড হওয়ার আগে যদি মাঝে মাঝে ব্লিডিং দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করতে হবে। ব্লিডিং ও গর্ভধারণের ইশারা দিয়ে থাকে।

খাওয়া দাওয়ার পরিবর্তন: এ সময়ে মুখের রুচি অনেক প্রায় পাল্টে যায়। পছন্দের যেসব খাবার সেগুলোতে অনেক অরুচি চলে আসে । আবার অপছন্দের অনেক খাবার এর প্রতি রুচি আসে । আবার অনেক কিছু খাবার খাওয়ার ইচ্ছা হতে পারে যে কোন সময়ে।

মাথা ঘোরা এবং মুড সুইং হওয়া: গর্ভবতী অবস্থায় একজন মেয়ের হরমোনের নানা পরিবর্তন হতে পারে। আর এই হরমোনের পরিবর্তনের ফলে মুড সুইং হয় । এর ফলে অনেক সময় কান্নাকাটি করা, রেগে যাওয়া, আকর্ষণিক হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। আবার সময় সময় মাথা ঘোরা ইত্যাদি দেখা দিলে পরীক্ষা করে নিবেন।

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ

পিরিয়ড মিস হওয়ার আগেই জানতে পারবেন যে আপনি গর্ভধারন করেছেন ।সেজন্য সচেতন থাকতে হবে ।দেখতে হবে শরীর কোনো পরিবর্তন ঘটছে কিনা । যদি কোনো পরিবর্তন দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে এটা গর্ভধারন এর ইঙ্গিত। তবে আসুন লক্ষণগুলো জেনে নেই-
  • প্রথম সপ্তাহে হালকা রক্তপাত হতে পারে।
  • মুখের রুচির পরিবর্তন হতে পারে। আবার খাবারের গন্ধে অস্বস্তি বোধ হতে পারে।
  • অতিরিক্ত স্বপ্ন দেখা। অতিরিক্ত স্বপ্ন দেখাকে গর্ভধারণের ইশারা বলে মনে করা হয়।
  • মুখ হাত পায়ের হালকা পরিবর্তন কালো দাগও দেখা যায়।
  • প্রায় সময় ক্লান্ত অনুভব করা। পেটে বাচ্চা আসলে বাচ্চা কে পুষ্টি দেওয়ার জন্য রক্ত উৎপন্ন করে। রক্ত উৎপন্নর ফলে গর্ভধারণ অবস্থায় শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
  • প্রথম সপ্তাহে প্রচন্ড মাথাব্যথা দেখা যায়। হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণে এরকম হয়।

গর্ভবতী হওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহের লক্ষণ?

শরীরের গঠন অনুযায়ী দ্বিতীয় সপ্তাহে সেরকম ভাবে কোন কিছু বোঝা যায় না যে গর্ভধারণ করেছে কিনা। কিন্তু কিছু কিছু লক্ষণ দেখা যায়। দ্বিতীয় সপ্তাহের এই লক্ষণ গুলো গর্ভধারণের ইশারা দিয়ে থাকে। তবে আসুন লক্ষণগুলো দেখে নেই-
  • দ্বিতীয় সপ্তাহে HCG এর মাত্রা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে ফলে বুকের স্তন ব্যথা বা ফুলে যায়।
  • প্রায় সময় বমি বমি ভাব হবে। সকালে ও দিনে অনেকবার বমি হওয়া দ্বিতীয় সপ্তাহের গর্ভধারণের লক্ষণ।
  • স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঘন ঘন প্রসাবের চাপ আশা ও গর্ভধারণের ইঙ্গিত দেয়। এক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি কিট পরীক্ষা করতে হবে তাহলে জানা যাবে গর্ভধারণ হয়েছে কিনা।
  • এ সময় হালকা হালকা ব্লিডিং দেখা দেয়। আবার ব্লিডিং এর সাথে হালকা সাদা স্রাব দেখা দেয়। যদি ব্লিডিং এর পরিমাণ বেশি হয় সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
  • দ্বিতীয় সপ্তাহ তেও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই তাপমাত্রা হরমোনের পরিবর্তনের ফলে হয়ে থাকে।
  • তলপেট ব্যথা হতে পারে হালকা। যদি ব্যথার পরিমাণ বেশি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রেও ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
উপরের লক্ষণগুলো দ্বিতীয় সপ্তাহের লক্ষণ। প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ এর মাধ্যমে জানা না গেলেও দ্বিতীয় সপ্তাহের লক্ষণের মাধ্যমে জানা যায় গর্ভধারণ হয়েছে কিনা সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখবেন লক্ষণগুলো খেয়াল করবেন।

গর্ভবতী হওয়ার তৃতীয় সপ্তাহের লক্ষণ

গর্ভধারণের কিছু লক্ষণ এক একটা মহিলার ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায় যেগুলো প্রায় এক এক রকম হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি গর্ভবতী কিনা। তবে আসুন তৃতীয় সপ্তাহের লক্ষণগুলো জেনে নেই-
  • স্তন ব্যথা বা ফুলে যাওয়া
  • প্রায় সময় ক্লান্ত অনুভব হওয়া
  • বারবার প্রস্রাব হওয়া
  • পছন্দের অনেক খাবারের প্রতি অরুচি চলে আসা
  • বমি বমি ভাব সকল বিকালে প্রায় বমি হওয়া
  • হালকা রক্তপাত ও ব্রিডিং দেখা দেওয়া
  • তাপমাত্রা বেশি হঠাৎ অনুভব হওয়া
এই তৃতীয় সপ্তাহে পেটের বাইরে কোন পরিবর্তন দেখা যায় না। কিন্তু ভিতরে অনেক পরিবর্তন অনুভব করা যায় ।এসব লক্ষণ এর মাধ্যমে জানা যায় পিরিয়ড মিস হওয়ার আগের সপ্তাহে গর্ভধারণ হয়েছে কিনা। তবে কোন কোন মহিলার ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে।

লক্ষণছাড়া গর্ভবতী

অনেক মেয়ে আছে যারা গর্ভধারণ করে ঠিকই কিন্তু কোন রকম লক্ষণ বুঝতে পারে না। কোন লক্ষণ ছাড়া কি গর্ভধারণ করা যায়, হ্যাঁ যাই। তিন চার, মাস বোঝা না গেলেও পাঁচ মাস থেকে আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে। কারণ এর সময় তার শরীরের কিছু পরিবর্তন ঘটবে এই পরিবর্তনের মাধ্যমে বুঝতে পারবে। পাঁচ মাস থেকে একজন গর্ভবতী মহিলার পেট বড় হতে থাকবে ,ঘন ঘন খিদা লাগবে। তখন আপনি প্রেগনেন্সি টেস্ট বা ডাক্তার এর পরামর্শ নিলে বুঝতে পারবেন আপনি কোন রকম লক্ষণ ছাড়া গর্ভবতী হয়েছেন।

প্রেগন্যান্ট হওয়ার কতদিন পর বমি হয়

সব মহিলার কিন্তু বমি হয় না। কিন্তু প্রায় ৮০% মেয়েদের বমি হয় আর ২০ % মেয়েদের বমি হয় না। শরীরে HCG হরমোন বেশি হলে বমি হয় ।আবার বমি বমি ভাব হয় ।বমি বমি ভাব গর্ভধারণের একটি লক্ষণ বলে আমরা মনে করি। এবং ১ম সপ্তাহ থেকে দেখা যায় কিন্তু ৬ সপ্তাহ থেকে বমি হওয়া শুরু হয়। ১২ সপ্তাহ পর বমি হওয়া আস্তে আস্তে কমে যায়।

দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

সাধারণভাবে প্রথমবার গর্ভধারণের সময় যে প্রাথমিক লক্ষণ গুলো দেখা যায় ।সে লক্ষণ গুলো দ্বিতীয়বার গর্ভধারণের সময় দেখা যায়। তবে কিছু কিছু মহিলা জানিয়েছে যে. প্রথমবার যে লক্ষণ গুলো দেখা দিয়েছিল। দ্বিতীয় বার আর দেখা যায়নি।
আবার কিছু মহিলা বলেছে যে, প্রথমবার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি কিন্তু দ্বিতীয় বার দেখা গেছে। একেক মহিলার ক্ষেত্রে একেক রকম। তবে কেউ দ্বিতীয় বার গর্ভবতী হওয়ার ফলে নতুন কিছু লক্ষণের সম্মুখীন হতে পারে। তবে দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হলে অন্যান্য লক্ষণ দেখা না দিলেও কিছু লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলো বোঝা যেতে নাও পারে।
  • কিছু মহিলা জানিয়েছে যে প্রথমবার গর্ভধারণের সময় তাদের বমি বমি ভাব বা গা গলানো এসব কোনো লক্ষণ ছিল না কিন্তু দ্বিতীয় বার এই লক্ষণটি তাদের দেখা যায়
  • আবার বাচ্চার নড়াচড়া তাড়াতাড়ি বুঝা যায়
  • দ্বিতীয়বার গর্ভধারণের সময় শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে যায়

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক পাঠিকাবৃন্দ আমি আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে জানাতে চেষ্টা করেছি যে, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায় ।পিরিয়ডনেস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ? গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ ?গর্ভবতী হওয়া দ্বিতীয় সপ্তাহের লক্ষণ?

আরো জানাতে চেষ্টা করেছি যে, গর্ভবতী হওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহের লক্ষণ ?লক্ষণ ছাড়া গর্ভবতী ,প্রেগনেন্ট হওয়ার কতদিন পর বমি হয়, দ্বিতীয় বার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ? ইত্যাদি এই পোস্টগুলোর মাধ্যমে আপনাদের সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি ।যদি আমার পোস্টগুলো আপনাদের ভালো লাগে তাহলে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জুয়াদ্দার এআই এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্টের উত্তর দেওয়া হয়

comment url